ভারতের যুদ্ধবিমান পাকিস্তান ধ্বংস করেছিল, অবশেষে মানলেন সেনা সর্বাধিনায়ক! কতগুলি? স্পষ্ট করলেন না অনিল চৌহান

News

পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে, অবশেষে মেনে নিলেন সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। এই প্রথম ভারতের তরফে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা মেনে নেওয়া হল। সাংগ্রিলা বৈঠকে যোগ দিতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন সিডিএস। শনিবার সেখানেই ব্লুমবার্গ টিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত এবং ভারতের যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি উত্তর দেননি অনিল। তবে তিনি যা বলেছেন, তাতে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে অনিলকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘জেনারেল, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। পাকিস্তান কি ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল? এক বা একাধিক?’’ সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেননি ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ সাংবাদিক এর পর আরও জোর দিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন, ‘‘তার মানে অন্তত একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ধ্বংস হয়েছিল?’’ সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বলে অনিল ভারতীয় সেনার কৌশল ব্যাখ্যায় জোর দেন। বলেন, ‘‘ইতিবাচক দিক হল, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলটা তখনই বুঝতে পেরেছি এবং তা শুধরে দু’দিন পর আবার সেই কৌশল প্রয়োগ করেছি। সব যুদ্ধবিমান আবার আমরা উড়িয়েছি এবং দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি।’’

এর পর ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের অন্তত ছ’টি যুদ্ধবিমান তাদের হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেটা কি সত্যি? অনিলের জবাব, ‘‘একেবারেই নয়।’’ তবে কতগুলি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে আর কিছু বলেননি অনিল। ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক এর পর আবার বলেন, ‘‘বিমান ধ্বংসের তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণই নয়। কেন তা ধ্বংস হল এবং তার পর আমরা কী করলাম, আমাদের কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করে ভারত। পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। প্রত্যাঘাতের সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। টানা চার দিন দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলার পর গত ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘর্ষবিরতির কথা প্রথম সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেন। ট্রাম্প সে দিন বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকার মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনার পর পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়ে গিয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। বাস্তবজ্ঞান এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার সদ্ব্যবহার করার জন্য দুই দেশকে অভিনন্দন।’’ পরবর্তীতে তিনি দাবি করেন, ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু সংঘাতের দিকে এগোচ্ছিল। আমেরিকার মধ্যস্থতাতেই সংঘর্ষবিরতি সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল অনিলকে। ট্রাম্পের দাবি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেননি তিনি। তবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে তিনি মানতে চাননি। অনিল বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, সাধারণ অভিযান এবং পরমাণু সংঘর্ষের মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে।’’ পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাস্তা সব সময় খোলা ছিল বলেও জানিয়েছেন সেনা সর্বাধিনায়ক।

ভারত-পাক সংঘাতে ভারতের দিকে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিলই। পাকিস্তান বার বার দাবি করেছে, ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান তাদের হামলায় ধ্বংস হয়েছে। এমনকি, রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। ভারতের তরফে যার কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। সংঘর্ষবিরতির পরের দিনই বায়ুসেনার ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশন (ডিজিএও) একে ভারতীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি সরাসরি উত্তর দেননি। বলেছিলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতি যে কোনও যুদ্ধেরই অংশ। কিন্তু প্রশ্ন হল, আমরা কি আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছোতে পেরেছি? উত্তর হল, হ্যাঁ।’’ তবে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন ডিজিএমও। তিনি সে দিন কেবল একটি তথ্যই নিশ্চিত করেছিলেন, ভারতের সমস্ত পাইলট নিরাপদে ফিরে এসেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাকর্তা, নানা জায়গায় একাধিক বার ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা দাবি করে এসেছেন। ভারত এ বার তা মেনে নিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *